ইতিহাসে কিছু ব্যক্তিত্ব এমন আছেন, যাঁরা তাঁদের মানবিকতা, নৈতিকতা, এবং অবদানের জন্য সারা বিশ্বে প্রশংসিত এবং স্মরণীয়। এমন ব্যক্তিদের তালিকায় পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নাম প্রথমে আছে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর অনন্য জীবন ও কর্মের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য ন্যায়, করুণা, এবং সততার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণতা তাঁর নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
তিনি সর্বদা সবার সঙ্গে সমান আচরণ করতেন এবং ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কখনো আপস করতেন না। ক্ষমা প্রদর্শনে ছিলো তার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তায়েফের মানুষ যখন তাঁকে অপমান করেছিল, তখন তিনি তাঁদের ধ্বংসের পরিবর্তে তাঁদের জন্য ক্ষমা ও হেদায়েতের দোয়া করেছিলেন।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষের তালিকা
মানব ইতিহাসে এমন অনেক মহাপুরুষ আছে তাঁদের নিজ নিজ সময়ে এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে মানবতার জন্য অসাধারণ অবদান রেখেছেন। তাঁদের জীবন ও শিক্ষা শুধু সমসাময়িক যুগে নয়, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। এমন ব্যক্তিদের নিয়ে নিচে আলোচনা করা হয়েছে-
১। হযরত মোহাম্মদ (সা.): মুহাম্মাদ নামের অর্থ “প্রশংসনীয়” যা তাঁর মহান চরিত্র ও গুণাবলীর প্রতিফলন। কুরআনে মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্য ব্যবহৃত উপাধিগুলো তাঁর জীবন ও মিশনের বিভিন্ন দিককে নির্দেশ করে। তিনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ রাসূল এবং তাঁর প্রতিটি উপাধি মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিক ও প্রেরণাদায়ক।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ
- মুহাম্মাদ (সা.) ন্যায়বিচারের এক মূর্ত প্রতীক ছিলেন।
- দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসও দান করতেন।
- ব্যবসার ক্ষেত্রে সততা এবং ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা দেন।
- বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেন, “আরবদের ওপর অনারবের এবং অনারবের ওপর আরবদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তাকওয়ার (ধর্মভীরুতা) ভিত্তিতে।”
- বলেছেন, “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য বাধ্যতামূলক।”
- জ্ঞানের সন্ধানকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেন।
- নিজে সাধারণ জীবনযাপন করতেন এবং অনাথ ও গরিবদের সাহায্য করতেন।
- দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার শিক্ষা দেন এবং উৎসাহিত করেন।
- মায়ের মর্যাদাকে স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।”
- নারীদের প্রতি অন্যায়-অবিচার বন্ধ করেন।
- মদিনা সনদ রচনা করে তিনি সব ধর্মের মানুষকে সমান অধিকার দিয়েছিলেন।
- তিনি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর পক্ষপাতিত্ব করতেন না।
- জাহেলিয়াতের যুগে বিভক্ত আরব জাতিকে একত্রিত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
- হুদাইবিয়ার সন্ধি এবং মক্কা বিজয়ের সময় শত্রুদের প্রতি ক্ষমাশীলতা দেখিয়ে শান্তির উদাহরণ সৃষ্টি করেন।
- কন্যাসন্তানের জন্মকে অভিশাপ মনে করার সংস্কৃতি দূর করে নারীদের অধিকার সুরক্ষিত করেন।
- দাসদের প্রতি সদয় আচরণ এবং তাদের মুক্তির জন্য কাজ করেন।
- তিনি দরিদ্র, এতিম এবং অসহায়দের প্রতি করুণাময় ছিলেন।
- তায়েফের মানুষের দ্বারা অবমানিত হওয়ার পরও তিনি তাদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করেন।
- বর্ণ, গোত্র বা আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে বৈষম্য দূর করেন।
- সমাজ থেকে মদ, জুয়া, এবং অসামাজিক কার্যকলাপ দূর করেন।
- এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন।
- মিথ্যা বলা এবং ওজনে কম দেওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন।
- তিনি কখনো নিজের জন্য কিছু সংরক্ষণ করেননি।
আরো পড়ুন:- আল্লাহর ৯৯ নাম আরবি ও বাংলা অর্থসহ ফজিলত
২। যিশু খ্রিষ্ট: যিশু খ্রিস্ট ছিলেন প্রাচীন গালীলীয় ইহুদি ধর্মীয় নেতা, যাঁকে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যিশুর জন্মস্থান নাসারেত এবং তাঁর জন্মের দিনকে খ্রিস্টানরা ক্রিসমাস হিসেবে উদযাপন করে।যিশু খ্রিস্ট কেবল একজন ধর্মীয় নেতা নন, বরং ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। যিনি ভালোবাসা, ক্ষমা, এবং নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে মানবজাতির জীবন ও সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছেন।
তাঁর জীবন ও শিক্ষা পৃথিবীর অনেক মানুষকে প্রেরণা দিয়েছে এবং আজও তা মানবতার জন্য একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে।
আরো পড়ুন: ইসলামিক নামের গুরুত্ব
৩। গৌতম বুদ্ধ: গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ সালে লুম্বিনী গ্রামে। রাজপুত্র হিসেবে বিলাসবহুল জীবনের মধ্যেও তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে উপলব্ধি করেন।জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি সমান আচরণের গুরুত্ব আরোপ করেন।তিনি বলেন, “মানুষের মূল্য তার কর্মে, জাতিতে নয়।”
তাঁর অনুসারীদের দ্বারা বৌদ্ধধর্ম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি একটি বৈশ্বিক ধর্মে পরিণত হয়।
আরো পড়ুন: ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম
গৌতম বুদ্ধের বাণী: “মানুষের মূল্য তার কর্মে, জাতিতে নয়।” ঘৃণা কখনো ঘৃণার দ্বারা দূর হয় না, তা ভালোবাসা দ্বারা দূর হয়।
৪। নেলসন মেন্ডালা:
নেলসন মেন্ডালা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা এবং বিশ্বজুড়ে ন্যায়বিচার, সমতা এবং মানবাধিকারের প্রতীক। তাঁর জীবন এবং সংগ্রাম জাতিগত বৈষম্য, নিপীড়ন এবং অন্ধকার যুগের বিরুদ্ধে এক সংগ্রামের ইতিহাস হিসেবে চিহ্নিত হয়।
ম্যান্ডেলা শুরুতে অহিংস আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন ১৯৬৪ সালে “রাষ্ট্রদ্রোহ” এবং “বিদ্রোহী কার্যকলাপ” এর অভিযোগে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি ২৭ বছর কারাগারে কাটান। ১৯৯৪ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।
- ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, “শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যা দিয়ে তুমি বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারবে।”
- তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ, সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় একতাবদ্ধ জাতি গঠন করতে তাঁর নেতৃত্ব দিয়ে ইতিহাসে এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
- তিনি নিজের জাতির মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করেন।
মেন্ডেলা শুধু দক্ষিণ আফ্রিকারই নয়, বিশ্বের সকল মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা এবং শান্তির জন্য একটি চিরকালীন আদর্শ হয়ে থাকবেন।