ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ

ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ

ইফতার কি

ইফতার ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি নবী মুহাম্মদ এর সুন্নত এবং আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ। ইফতারের মাধ্যমে রোজাদার সারাদিনের সংযমের পর শারীরিক ও আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে।

ইসলামে ইফতারকে গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এটি মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে খেজুর, পানি বা অন্য কোনো হালকা খাবার দিয়ে শুরু করা সুন্নত। ইফতারের পূর্বে ইফতারের দোয়া পড়া এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করাও অন্যতম ইবাদত।

ইফতারের সঠিক সময়

ইফতার যথাসময়ে করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কুরআনে আল্লাহ তাআলা রোজা রাখার ও ইফতারের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন। ইফতার দেরি না করে সঠিক সময়ে করা আল্লাহর নির্দেশ পালনের অংশ। ইফতারের সময় নিয়ে নিচের বিষয় সমূহ লক্ষ্য রাখুন-

সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা উত্তম।

তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে কিছুটা বিলম্ব করে নিশ্চিত হওয়া উচিত।

বর্তমান যুগে সময় নির্ধারণ সহজ হওয়ায়, নির্ধারিত সময় অনুসারে ইফতার করা বাঞ্ছনীয়।

ইফতারের দোয়া

ইফতারের সময় পাঠ করা ইফতারের দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নবী মুহাম্মদ এর সুন্নত এবং আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম মাধ্যম। রোজাদারের ইফতারের মুহূর্তটি বিশেষ বরকতময়, কারণ এই সময়ে তার দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না। নিচে ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ আলোচনা করা হলো-

হযরত মোহাম্মদ (স.)  ইফতার করার সময় নিচের দোয়াটি পড়তেন-

আরবি:
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ

বাংলা উচ্চারণ:
“জাহাবাজ্-জামাউ, ওয়াবতাল্লাতিল-‘উরূকু, ওয়া ছাবাতাল-আজরু ইন শাআল্লাহ”


“পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপশিরা সিক্ত হলো, এবং আল্লাহর ইচ্ছায় সওয়াব প্রতিষ্ঠিত হলো।”
হাদিস সূত্র: সুনান আবু দাউদ ২৩৫৭ (সহিহ)

দোয়া কবুল হওয়ার সময়: ইফতারের মুহূর্তে রোজাদার সারাদিনের ধৈর্য ও সংযমের পুরস্কার হিসেবে আল্লাহর কাছ থেকে দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সুযোগ পান। তাই এই সময়ে আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, রহমত ও দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ কামনা করা উচিত।

আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার এক অপার রহমত। ইফতারের দোয়ার মাধ্যমে রোজাদার আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং স্বীকার করেন যে সমস্ত রিজিক ও অনুগ্রহ তাঁরই দেওয়া।

আত্মিক প্রশান্তি ও বরকত: ইফতারের সময় দোয়া পাঠ করা আত্মিক প্রশান্তি এনে দেয় এবং ইফতারে বরকত বৃদ্ধি করে। দোয়ার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে, যা তার ঈমানকে আরও দৃঢ় করে।

রোজাদারের ইফতারের মুহূর্তটি বিশেষ বরকতময়, কারণ এই সময়ে তার দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না। ইফতারের দোয়া শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা, রহমত লাভের মাধ্যম এবং দোয়া কবুলের একটি সুবর্ণ সুযোগ।

ইফতারের ফজিলত ও গুরুত্ব

ইফতার রোজার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আমাদের আল্লাহর সাথে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে এবং সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলে। এটি শুধুমাত্র রোজা ভাঙার সময় নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক ও সামাজিক । কুরআন ও হাদিসে ইফতারের অসীম ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এখানে ইফতারের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়। এরপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত।” — (সুরা আল-বাকারা, ২:১৮৭)

রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন,

“রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে: এক. ইফতারের সময়, দুই. আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়।” — (বুখারি, হাদিস: ১৯০৪)

তিনি আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হবে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে—অথচ রোজাদারের সওয়াব কমবে না।”

ইফতার পার্টি বা মসজিদে সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন সমাজের অসহায় মানুষের প্রতি দয়া ও সহানুভূতির প্রকাশ।

ইফতার সময়ে পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব এবং গরিবদের একত্রে খাওয়ানো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এটি সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে।

সারাদিনের উপবাসের পর ইফতার ধৈর্য ও সংযমের শিক্ষা দেয়, যা মুমিনের চরিত্রের উন্নতির জন্য সহায়ক।

রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সময়। ইফতারের মাধ্যমে আল্লাহর অসীম রহমত লাভের সুযোগ তৈরি হয়।

ইফতার হলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ, যেখানে বান্দা তাঁর নির্দেশ পালন করে এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে।

হাদিসে এসেছে,

“রোজা ও কুরআন কিয়ামত দিবসে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে… রোজা বলবে: ‘হে রব! আমি তাকে দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছি; আমার কারণে তার জন্য সুপারিশ কবুল করুন।’” — (মুসনাদে আহমাদ)

সারাদিন উপবাসের পর ইফতার শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং শক্তি পুনরুদ্ধার করে।

ইফতারের সময় আল্লাহর জিকির ও দোয়া মানসিক চাপ কমায় এবং আত্মিক শান্তি এনে দেয়।

সুন্নত অনুসারে খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার শুরু করলে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম সক্রিয় হয়।

ইফতার শুধুমাত্র রোজা ভাঙার সময় নয়, বরং এটি আল্লাহর আনুগত্য, সামাজিক দায়িত্ব ও আত্মশুদ্ধির সমন্বিত একটি ইবাদত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইফতারের প্রকৃত ফজিলত অনুধাবন করে তা সঠিকভাবে পালনের তাওফিক দান করুন।

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

close button