পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ চিহ্নিত করা সত্যিই কঠিন এবং প্রায় অসম্ভব, কারণ এটি নির্ভর করে ব্যক্তির কাজ, প্রভাব এবং সেগুলোর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। তবে বেশিরভাগ মানুষের মতে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মনুষ আডলফ হিটলার। তিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
ভালো-মন্দের মাপকাঠি সাধারণত ব্যক্তি বিশেষ, সমাজ এবং সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন হয়। কেউ হয়তো একটি নির্দিষ্ট কাজ বা নেতাকে অত্যন্ত নিন্দা করে, আবার অন্য কেউ হয়তো একই ব্যক্তিকে বা কাজকে ভালো বলে থাকে।
তবে ইতিহাস আমাদের সুযোগ দেয় এই নেতিবাচক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করার এবং ভবিষ্যতে একই ভুল এড়ানোর। এর মাধ্যমে আমরা শিখতে পারি কিভাবে আরও ন্যায়সঙ্গত, শান্তিপূর্ণ এবং মানবিক পৃথিবী গড়ে তোলা যায়।
কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যাদের কাজের জন্য ইতিহাসে তাদেরকে ব্যাপকভাবে সমালোচিত করা হয়। তাদের মধ্যেপৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ দশ জন ব্যক্তির তালিকা নিচে দেওয়া হলো। তাদের প্রত্যেকেই বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ভয়াবহ অপরাধ করেছেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষের নামের তালিকা
ক্রম | নাম | দেশ |
১ | আডলফ হিটলার | জার্মান |
২ | ইদি আমিন | উগান্ডা |
৩ | লিওপল্ড | বেলজিয়ামের |
৪ | জোসেফ স্তালিন | সোভিয়েত ইউনিয়ন |
৫ | মাও সেতুং | চীন |
৬ | বেনিতো মুসোলিনি | ইতালি |
৭ | কিম জং-ইল এবং কিম জং-উন | উত্তর কোরিয়া |
৮ | ইয়াসুকুনি তোমোতা | জাপান |
৯ | হ্যারি হেডলি | যুক্তরাষ্ট্র |
১০ | কেম্পি ফুসে | আফ্রিকা |
আরো পড়ন: আল্লাহর ৯৯ নাম আরবি ও বাংলা অর্থসহ ফজিলত
আডলফ হিটলার: আডলফ হিটলারছিলেন জার্মানির একজন একনায়কতান্ত্রিক নেতা, যিনি নাৎসি পার্টির (ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি) প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। ১৯৩৩ সালে তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর হন ১৯৩৩ সালে হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হন এবং শীঘ্রই গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
হিটলারের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় ইহুদি, রোমা, সমকামী, প্রতিবন্ধী এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের পরিকল্পিত গণহত্যা। আনুমানিক ৬০ লাখ ইহুদি এবং মোট ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ নাৎসি বাহিনীর হাতে নিহত হয়।
ইদি আমিন
ইদি আমিন উগান্ডার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার সামরিক ক্ষমতা ও নিষ্ঠুর শাসনের জন্য ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছেন। ইদি আমিনের শাসনামলে আনুমানিক ১ থেকে ৫ লাখ মানুষ নিখোঁজ বা নিহত হয়।নিহতদের মধ্যে সাধারণ জনগণ, সামরিক কর্মী, এবং জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ অন্তর্ভুক্ত ছিল।তার শাসন একটি ভীতিকর এবং রক্তাক্ত অধ্যায় হিসেবে উগান্ডার ইতিহাসে চিহ্নিত।
লিওপল্ড:
১৮৬৫ সালে পিতার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় লিওপোল্ড বেলজিয়ামের সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং দীর্ঘ ৪৪ বছর রাজত্ব করেন। তার শাসনের কারণে আনুমানিক ১ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়, যা ইতিহাসের অন্যতম বড় মানবিক বিপর্যয়তার কর্মকাণ্ড তাকে ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস এবং লোভী শাসক হিসেবে পরিচিত করেছে।দ্বিতীয় লিওপোল্ডের শাসন মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক কালো অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে।
জোসেফ স্তালিন
ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন প্রভাবশালী এবং বিতর্কিত নেতা,স্তালিনের শাসনে রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযান (Great Purge) চালানো হয়, যার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে বন্দী, নির্বাসিত বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।তার নীতির কারণে আনুমানিক কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটে, যার মধ্যে ছিল দুর্ভিক্ষ, বন্দিশিবিরে মৃত্যু এবং সরাসরি হত্যার শিকার হওয়া মানুষ।
শেষকথা: একজন ব্যক্তিকে সবচেয়ে খারাপ হিসেবে চিহ্নিত করার চেয়ে, তাঁর কর্মকাণ্ড, সেগুলোর কারণ এবং তার প্রভাব বিশ্লেষণ করা আরও গঠনমূলক এবং শিক্ষনীয় আমাদের জন্য। এভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা শুধুমাত্র সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকি না; বরং অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে উন্নততর মানবিকতা ও সমাজ গঠনের পথ খুঁজে পাই। যাতে প্রতিটি মানুষ মানবিক হতে পারে।