কুনুত” শব্দটি আরবি “কুনুতুন” থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো বিনয়, নম্রতা, আনুগত্য এবং স্থিরচিত্তে প্রার্থনা। ইসলামে দোয়া কুনুত একটি বিশেষ দোয়া, যা আমরা সাধারণত বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে রুকুর পর পাঠ করি।
কুনুত দোয়া শুধু কয়েকটি শব্দের সমষ্টি নয়, এটি আমাদের হৃদয় থেকে উৎসারিত এক গভীর আহ্বান। যখন আমরা কুনুত পড়ি, তখন আমরা আল্লাহর দরবারে নিজেদের দুর্বলতা ও অসহায়তা স্বীকার করি এবং তাঁর সাহায্য ও করুণা ভিক্ষা করি।
দোয়া কুনুতের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। তিনি আমাদের যে অসংখ্য নিয়ামত দিয়েছেন, তার জন্য আমরা তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। নিয়মিত এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর আরও কাছে যেতে পারি এবং তাঁর রহমত ও ক্ষমা লাভ করতে পারি।
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ
দোয়া কুনুত, সঠিকভাবে উচ্চারণের গুরুত্ব অপরিসীম, কেননা উচ্চারণে সামান্য ত্রুটিও অর্থের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে পারে। বাংলা উচ্চারণে দোয়া কুনুত পড়ার সময় কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখবেন-
সঠিক উচ্চারণ: প্রতিটি অক্ষরের সঠিক মাখরাজ এবং সিফাত বজায় রাখতে হবে। উচ্চারণে তাড়াহুড়ো করা বা ভুল উচ্চারণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বাংলা উচ্চারণ একটি সহায়ক মাধ্যম: বাংলা উচ্চারণে পড়াটা আরবি শিখতে না পারা পর্যন্ত একটি সহায়ক মাধ্যম। তবে, মূল আরবিতে পড়ার চেষ্টা করা উচিত, যা উচ্চারণের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করবে।
ধীরস্থির পাঠ: দোয়া কুনুত তাড়াহুড়ো করে না পড়ে, ধীরে ধীরে এবং বুঝে পড়তে হবে।
দোয়া কুনুত আরবি
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ
বিপদের সময়ের দোয়া কুনুত আরবি বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ
আরো পড়ুন: আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ অর্থ এবং ফজিলত
দোয়া কুনুত এর গুরুত্ব ও ফজিলত
দোয়া কুনুত, ইসলামে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দোয়া, যা রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং বিতর নামাজে নিয়মিত পাঠ করতেন। এটি বান্দার আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, ক্ষমা প্রার্থনা ও রহমত লাভের এক অনুপম মাধ্যম।
এই দোয়া আমাদের দুর্বলতা ও অসহায়তা স্বীকার করে আল্লাহর অসীম করুণা ও দয়ার প্রতি আমাদের নির্ভরতা প্রকাশ করে।
দোয়া কুনুতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত বিনম্রভাবে দোয়া করি, যা আমাদের প্রার্থনা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বৃদ্ধি করে।
এই দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় ও সাহায্য চাই এবং তাঁর উপর ভরসা রাখি।
এই দোয়া আমাদের রাতের ইবাদতকে আরও মূল্যবান করে তোলে এবং আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ককে গভীর করে।
এই দোয়া আমাদের আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও ভয়ের এক চমৎকার মিশ্রণ শিক্ষা দেয়, যা আমাদের ঈমানকে আরও শক্তিশালী করে।
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজ: নিয়ম নিয়ত ও ফজিলত
দোয়া কুনুত প্রশ্ন ও উত্তর
বিতর নামাজে দোয়া কুনুত না পারলে কি পড়তে হবে–
বিতর নামাজে দোয়া কুনুতের গুরুত্ব অনেক। তবে, যদি কেউ এটি মুখস্থ করতে না পারেন বা কোনো কারণে ভুলে যান, তাহলে তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। যদি কেউ দোয়া কুনুত মুখস্থ না জানেন, তবে তিনি বিতর নামাজে নিম্নলিখিত দোয়াগুলো পড়তে পারেন:
আল্লাহু আকবার: এটিও তিনবার বলা যেতে পারে।
রাব্বানা আতিনা: এই দোয়াটি তিনবার পড়তে পারেন।
দোয়া কুনুত মুখস্থ করার সহজ পদ্ধতি
দোয়া কুনুত মুখস্থ করার কিছু সহজ উপায় আলোচনা করা হলো:
ছোট অংশে ভাগ করে পড়া: দোয়াটিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে মুখস্থ করার চেষ্টা করুন।
নামাজে নিয়মিত পাঠ: নামাজে নিয়মিত দোয়া কুনুত পড়লে এটি ধীরে ধীরে মুখস্থ হয়ে যাবে।
নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ: দোয়া কুনুত মুখস্থ করার জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষের তালিকা
দোয়া কুনুত কি কোনো সূরার অংশ?
দোয়া কুনুত কোনো নির্দিষ্ট সূরার অংশ নয়।
দোয়া কুনুত কোন নামাজে পড়তে হয়?
বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে রুকুর পরে দোয়া কুনুত পড়া হয়।
কুরআনের ছোট দোয়া: অন্য কোনো ছোট কুরআনি দোয়াও পড়া যেতে পারে।