আরবি ভাষায় “জিমা” শব্দটি “সহবাস” বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যার আক্ষরিক অর্থ একসঙ্গে বসবাস করা। তবে সাধারণত এটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার অন্তরঙ্গ দাম্পত্য সম্পর্ক ও শারীরিক মিলনকে নির্দেশ করে। ইসলামের দৃষ্টিতে, সহবাস শুধু শারীরিক চাহিদা পূরণের উপায় নয়; বরং এটি দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা, মানসিক প্রশান্তি ও পারস্পরিক বোঝাপড়া সুদৃঢ় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সহবাসের আগে সহবাসের দোয়া পাঠ করা সুন্নত।
সহবাসের দোয়া বাংলা উচ্চারণ সহ
ইসলামে স্ত্রী সহবাসের আগে দোয়া পড়াকে সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দোয়া শয়তানের কুমন্ত্রণা ও নেতিবাচক প্রভাব থেকে স্বামী-স্ত্রীকে সুরক্ষা প্রদান করে। এছাড়া, সহবাসের পূর্বে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও কোমল আচরণ দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ও সৌহার্দ্যময় করে তোলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে- নিচে সহবাসের দোয়া আরবি বাংলা এবং অর্থসহ উপস্থাপন করা হয়েছে-
![সহবাসের দোয়া বাংলা](https://orthoki.com/wp-content/uploads/2025/02/স্ত্রী-সহবাসের-দোয়া-1024x536.png)
এই দোয়া পাঠ করার পর স্বামী-স্ত্রীর বৈধ মিলনে অপরিসীম সওয়াব রয়েছে, এবং আল্লাহর অনুগ্রহে সেই মিলন থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান শয়তানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজ: নিয়ম নিয়ত ও ফজিলত
সহবাসের উত্তম দিন এবং সময়
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে রবি, সোম ও বৃহস্পতিবারের রাতকে সহবাসের জন্য উত্তম সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। বলা হয়, এই দিনগুলোতে গঠিত সন্তান চরিত্রবান ও মেধাবী হয়।
শেষ রাতকে সহবাসের জন্য সর্বোত্তম সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এই সময় শরীর সুস্থ ও সক্ষম থাকে, খাবার হজম হয়ে যায় এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রশান্তি বিরাজ করে।
আরো পড়ুন: আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ অর্থ এবং ফজিলত
সহবাসের নিষিদ্ধ সময়
![সহবাসের নিষিদ্ধ সময়](https://orthoki.com/wp-content/uploads/2025/02/সহবাসের-নিষিদ্ধ-সময়.png)
স্বাস্থ্য ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু সময়ে সহবাস করা অনুচিত বলে গণ্য করা হয়। রাতের খাবারের পর অন্তত তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করা উচিত, অর্থাৎ মধ্যরাতের আগে সহবাস থেকে বিরত থাকা উত্তম। প্রবাসযাত্রার রাত্রে, পূর্ণিমা ও অমাবস্যার রাতে, চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণকালে সহবাস করা বর্জনীয়।
ছোট বাচ্চা থাকলে সর্তকতা, ঘুমন্ত শিশু যদি হঠাৎ জেগে এ দৃশ্য দেখে ফেলে, তবে তার কোমল মনে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে তার মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
আরো পড়ুন: আল্লাহর ৯৯ নাম আরবি ও বাংলা অর্থসহ ফজিলত
অধিক সময় ধরে সহবাসের উপায়
দাম্পত্য জীবনে সুস্থ ও পরিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সহবাসের সঠিক পদ্ধতি ও সুন্নত অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় সহবাসের জন্য নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করুন—
ফোরপ্লেতে সময় দিন: সহবাসের আগে পর্যাপ্ত সময় ফোরপ্লেতে ব্যয় করলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় ও মিলনের স্থায়িত্ব বাড়ে।
বিরতি নিয়ে মিলন করুন: যদি দ্রুত পতনের সমস্যা দেখা দেয়, তবে মাঝে মাঝে বিরতি নিয়ে পুনরায় শুরু করা যেতে পারে। এটি সহবাসের সময় বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
দোয়া পাঠ করুন: সহবাসের আগে ও পরে দোয়া পড়া সুন্নত, যা এই সম্পর্ককে বরকতময় করে এবং শয়তানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন: শারীরিক সক্ষমতা ও সহবাসের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাবার যেমন—বাদাম, মধু, কালোজিরা, খেজুর, দুধ ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখা উপকারী। এগুলো সহবাসের শক্তি ও সহনশীলতা বাড়াতে সহায়ক।
পারস্পরিক সন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিন: সহবাসের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের একে অপরের চাহিদা বোঝা, যত্নশীল আচরণ করা এবং আন্তরিক ভালোবাসা প্রকাশ করলে সম্পর্ক আরও গভীর ও আনন্দদায়ক হয়।
সুন্নত ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুসরণ করে সহবাস শুধু শারীরিক চাহিদা পূরণের উপায় নয়; বরং এটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর ভালোবাসা, মানসিক সংযোগ ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে তোলে, যা দাম্পত্য জীবনকে আরও সুখী ও পরিপূর্ণ করে।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষের তালিকা
কতক্ষণ সহবাস করা উচিত
সহবাসের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারিত নেই। এটি সম্পূর্ণরূপে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসা, স্বাচ্ছন্দ্য, শারীরিক সামর্থ্য ও তৃপ্তির ওপর নির্ভরশীল।
গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ দম্পতির জন্য ৭-১৫ মিনিটের সহবাস স্বাভাবিক ও তৃপ্তিদায়ক। তাই মিলনের সময় এই পরিসীমার মধ্যে থাকলে উভয়ের জন্যই তা স্বস্তিদায়ক হতে পারে। তবে এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়াই এখানে মুখ্য।
আরো পড়ুন:
পিরিয়ডের কতদিন পর সহবাস করলে গর্ভবতী হয়
একজন নারীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে ওভুলেশন পিরিয়ডের সময়, অর্থাৎ পিরিয়ড শুরুর ১২–১৬ দিনের মধ্যে যদি সহবাস করা হয়, তবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।যদি গর্ভধারণের পরিকল্পনা থাকে, তাহলে পিরিয়ডের ১২–১৬ দিনের মধ্যে সহবাস করা সবচেয়ে কার্যকর পন্থা।
![সহবাসের কত দিন পর গর্ভবতী হয়](https://orthoki.com/wp-content/uploads/2025/02/পিরিয়ডের-কতদিন-পর-সহবাস-করলে-গর্ভবতী-হয়.png)
মাসিকের কত দিন পর সহবাস করলে গর্ভবতী হয় না
যদি গর্ভধারণ এড়াতে চান, তাহলে মাসিক চক্রের এমন কিছু সময় আছে, যখন সহবাস করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। গর্ভধারণ এড়ানোর জন্য মাসিকের প্রথম ৭ দিন এবং ওভুলেশন শেষ হওয়ার ৩-৪ দিন পর থেকে পরবর্তী মাসিক শুরুর আগ পর্যন্ত সহবাস করা নিরাপদ হতে পারে।মরে রাখবেন এটি সব নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কারণ মাসিক চক্র ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
মাসিকের কতদিন পর সহবাস করা যায়
ইসলামে মাসিক চলাকালীন সহবাস করা হারাম। তবে, মাসিক সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পর সহবাসের অনুমতি রয়েছে। মাসিক চক্র সাধারণত ৩–৭ দিন স্থায়ী হয়। যতদিন মাসিক চলবে, ততদিন সহবাস নিষিদ্ধ।
গর্ভাবস্থায় সহবাসের নিয়ম আমল ও দোয়া
![সহবাসের নিয়ম](https://orthoki.com/wp-content/uploads/2025/02/গর্ভাবস্থায়-সহবাসের-নিয়ম.png)
ইসলামে গর্ভাবস্থায় সহবাস বৈধ, তবে স্ত্রী ও সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কুরআন ও হাদিসে গর্ভাবস্থায় সহবাস নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে যদি স্ত্রীর কোনো কষ্ট হয়, তাহলে সহবাস থেকে বিরত থাকা উত্তম।
গর্ভাবস্থা নারীর জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত ও নিয়ামত। এই সময়ে ভালো আমল, ইবাদত ও দোয়া মায়ের জন্য যেমন কল্যাণকর, তেমনই অনাগত সন্তানের জন্যও বরকত বয়ে আনে। গর্ভাবস্থায় করণীয় আমল:
গর্ভাবস্থায় মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা
সন্তানের নেককার হওয়ার জন্য দোয়া
সন্তানের সুস্থতার জন্য দোয়া
দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য দোয়া
সুরা ইউসুফ ও সুরা মারিয়াম তিলাওয়াত করা
হারাম ও অবৈধ বিষয় থেকে দূরে থাকা
নিয়মিত নামাজ আদায় করা
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা
গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি ভালো আমল, ইবাদত ও দোয়া করা উচিত। এতে মায়ের সওয়াব যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতও আল্লাহর রহমতে শুভ হবে।
আরো পড়ুন:
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
শিশুর গায়ের রং মূলত জিনগত কারণে নির্ধারিত হয়। তবে, গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও সুন্নত আমল পালন করলে শিশুর ত্বক স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
শিশুর উজ্জ্বল ত্বকের জন্য উপকারী খাবার:
দুধ
নারকেল পানি
খেজুর ও মধু
কাঠবাদাম
ফল ও সবুজ শাকসবজি
গাজর
আয়রন ও ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভাবস্থায় করণীয় আমল ও দোয়া:
সুরা ইউসুফ বেশি বেশি তিলাওয়াত করা
সুরা মারিয়াম তিলাওয়াত করা
গুনাহ থেকে বিরত থাকা ও ভালো কাজ করা
নিয়মিত নামাজ পড়া ও আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করা
শিশুর গায়ের রং জেনেটিক কারণে নির্ধারিত হলেও, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও আত্মিক আমল পালন করলে শিশুর ত্বক উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর হতে পারে।
উপসংহার
স্ত্রী সহবাস শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একে অপরের প্রতি দায়িত্ব, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার মাধ্যমে হওয়া উচিত। সহবাসের সময় শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার কথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সঠিক সময় নির্বাচন, পবিত্রতা বজায় রাখা, এবং সুন্নত অনুযায়ী আমল করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সহবাস একটি মহান দায়িত্ব, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দাম্পত্য জীবনের সুখশান্তি অর্জনের মাধ্যম হতে পারে।